সিলেটের আলাপ ডেস্ক :বরিশালের গৌরনদীতে স্বামীর বিরুদ্ধে পালক ছেলেকে হত্যার অভিযোগ তুলেছেন স্ত্রী। তবে স্বামীর দাবি, ডোবার পানিতে ডুবে ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
আর তাদের দুই রকম দাবির ভিত্তিতে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পাশাপাশি এ ঘটনায় গৌরনদী মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলালউদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার গৌরনদী উপজেলার শরিকল ইউনিয়নের মিয়ার চর গ্রামে বাড়ির পাশের ডোবা থেকে ৭ বছর বয়সী শিশু তানজিমুল ইসলাম ফাহিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশুর মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (১৯ জুলাই) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে শিশুর মৃত্যুর কারণ বলতে পারব।
শিশু ফাহিমকে মিয়ার চর গ্রামের নিঃসন্তান এনামুল হক চৌকিদার ও ফেরদৌসি বেগম দম্পতি দত্তক নিয়েছিলেন। তবে এনামুল দ্বিতীয় বিয়ে করায় ফেরদৌসির সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়।
শিশু ফাহিম এনামুলের সঙ্গে থাকতো বলে জানিয়েছেন শরিকল তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মো. শাহিন।
এসআই মো. শাহীন শিশুটির পালক বাবা এনামুলের বরাতে বলেন, মঙ্গলবার সকালে বাড়ির উঠানে খেলছিল ফাহিম। কিছুক্ষণ পর তাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে বাড়ির পেছনের ডোবায় ভেসে থাকা শিশুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ময়নাতদন্ত শেষে শিশুর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন এসআই শাহীন।
তিনি আরও জানান, সুরতহাল প্রতিবেদনও তিনি করেছেন। শিশুর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। পানিতে ডুবে না অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে , তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না এলে বলতে পারব না।
শিশুর পালক মা ফেরদৌসি বেগম সাংবাদিকদের জানান, এনামুল ও তার ১৫ বছরের দাম্পত্যে জীবনে কোনো সন্তান নেই। তাই সাত বছর পূর্বে ফাহিমকে পালক হিসেবে নেন। তারপরও কিছুদিন পূর্বে স্বামী এনামুল গোপনে আরেকটি বিয়ে করলে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। যার ধারবাহিকতায় গত ১৫ জুলাই তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। বিচ্ছেদের দিনই ফাহিমকে ফেরদৌসীর কাছ থেকে নিয়ে যায় এনামুল।
ফেরদৌসি বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি ফাহিমকে দেখতে ছুটে আসি। আমার ফাহিমকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
কারণ, হিসেবে ফাহিমের মুখে দুধভাত দেখতে পেয়েছেন জানিয়ে দাবি করে তিনি বলেন, খাবারের সঙ্গে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ফাহিমকে। পানিতে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে এমন কোনো লক্ষণ দেখিনি। হত্যা ধামাচাপা দিতে ফাহিমকে পানিতে ফেলে দিয়েছে এনামুল ও তার পরিবারের লোকজনেরা।
শরিকল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাইরুল ইসলাম বলেন, আমি জানতাম ছেলেটি তাদের। কয়েক সপ্তাহ পূর্বে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছে। তখন জানতে পেরেছি ছেলেটি পালতে এনেছে। হাসপাতাল থেকে এনেছিলো। কোন হাসপাতাল থেকে এনেছে তা জানায়নি।
ইউপি সদস্য খায়রুল আরো বলেন, খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম, তবে পানিতে ডুবে মারা মারা যাওয়ার লক্ষণ নেই। যে ডোবায় তার মরদেহ পাওয়া গেছে, সেই ডোবার পানি উচ্চতা শিশুর চেয়ে কম। পানিতে ডুবে মারা গেলে নাক-কান দিয়ে রক্ত বের হয়। মুখ দিয়ে লালা বের হয়। কিন্তু শিশুর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো চিহ্ন নেই। পানিতে ডুবলে বাঁচার জন্য চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে তার হাতেপায়ে কাদা থাকা থাকবে। কিন্তু তাও নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে সঠিক কারণ অবশ্যই জানা যাবে।