রফিকুল ইসলাম সবুজ :সহিংসতা ও নাশকতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ দলটির সব অঙ্গসংগঠনকে সরকার নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর এখন তাদের অর্থ-সম্পদ কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আলোকেই জামায়াত-শিবিরের সব সম্পদ সরকার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।
জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্থিক, সেবামূলক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে পুলিশও জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১২৭টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে ৩৭৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। অভিযোগ আছে, বর্তমানে জামায়াতের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের সম্পদের তালিকায় রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, কেয়ারী ফুড, ইসলামী ব্যাংক চক্ষু হাসপাতাল, সান সিটি, দৈনিক সংগ্রাম, শতাব্দী প্রেস, আধুনিক প্রকাশনী প্রেস, দারুল ইসলাম ট্রাস্ট, সোনার বাংলা পত্রিকা, রাবেতা ইসলাম, দারুল ইসলাম ট্রাস্টসহ ১০৯টি প্রতিষ্ঠান।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিশাল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য রয়েছে। তাদের এনজিও ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখান থেকে নতুন নতুন জামায়াত-শিবির বের হবে। হয়তো জামায়াত-শিবির নামে কাজ করবে না, অন্য নামে তো ওই একই কাজই করবে। তাই জামায়াত-শিবিরের সম্পদ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্রুত বাজেয়াপ্ত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। তা না হলে জামায়াতের সৃষ্টি বন্ধ করা যাবে না।
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আলোকেই জামায়াত-শিবিরের সব সম্পদ সরকার বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমেও এটি করতে পারবে। যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই আইনের তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ সত্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত ধারা ২০-এ বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তিকে ধারা ১৮-এর বিধান অনুসারে তালিকাভুক্ত করা হয় বা কোনো সত্তাকে নিষিদ্ধ করা হয়, তা হলে এ আইনে বর্ণিত অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও সরকার, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যথা-উক্ত সত্তার কার্যালয় থাকলে বন্ধ করে দেবে, ব্যাংক এবং অন্যান্য হিসাব যদি থাকে, অবরুদ্ধ করবে এবং উহার সব সম্পত্তি জব্দ বা আটক করবে। সব ধরনের প্রচারপত্র, পোস্টার, ব্যানার অথবা মুদ্রিত, ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল বা অন্যান্য উপকরণ বাজেয়াপ্ত করবে এবং নিষিদ্ধ সত্তা কর্তৃক বা উহার পক্ষে বা সমর্থনে যেকোনো প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা, মুদ্রণ বা প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসম্মুখে বক্তৃতা প্রদান নিষিদ্ধ করবে। নিষিদ্ধ সত্তা উহার আয় ও ব্যয়ের হিসাব এতদুদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক মনোনীত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করবে এবং আয়ের সব উৎস প্রকাশ করবে।’
আইনের ধারা ২০ (৩)-এ বলা হয়েছে, ‘যদি প্রতীয়মান হয় যে, তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ সংঘঠনের সম্পত্তি অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে অথবা এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত হয়েছে, তা হলে উক্ত সম্পত্তি আদালত কর্তৃক রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।’
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইনের আলোকেই জামায়াতের সম্পদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনেই বলা আছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।
খবর পেতে সিলেটের আলাপ লাইক পেইজে ( LIKE ) দিতে ক্লিক করুন
সিলেট আলাপ// নাহিদ